টানা তিন মেয়াদের সরকার গঠন করে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই এবার সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চায় দলের হাই কমান্ড। এরই মধ্যে নির্ধারিত ইউনিটগুলোকে সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই শুরু হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সম্মেলন। তবে যে সব ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো গঠন করা সম্ভব হয়নি, সেগুলো আগে সম্পন্ন করা হবে। আর যেসব ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন হয় না সেসব ইউনিটে সম্মেলন করা হবে। একইভাবে আগামী সেপ্টম্বরের মধ্যে অসম্পন্ন জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ এবং দীর্ঘ দিন সম্মেলন হয় না এমন জেলা ও উপজেলাগুলোতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দৃঢ় তৎপরতার কারণ হচ্ছে ২১তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিলর ও ডেলিগেট লিস্ট প্রস্তুত করা।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, টানা তিনবার সরকার গঠন করার ফলে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ পরিপন্থিরা অনুপ্রবেশ করেছে। এসব অনুপ্রবেশকারীদের কারণে বেশ বিরক্ত দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটগুলোর সম্মেলন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বেশ ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করবেন। কোন ধরণের অনপ্রবেশকারী যাতে জায়গা না সেজন্য আগাম সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিনিধি সভা করছি। সেসব সভা থেকে আমরা তৃণমূলে নির্দেশনা দিচ্ছি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে যেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রয়োজন যেখানে সেটি করা হবে। চলতি মাস থেকেই এগুলো শুরু হবে। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলের পূর্বেই যে সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি সেগুলো পূর্ণাঙ্গ করবার এবং সেসব ইউনিটে দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়নি সেখানে সম্মেলন করার।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যেই বেশির ভাগ জেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সম্মেলনের দিন এসব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়নি। বেশির ভাগ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে সময় লেগেছিল এক-দেড় বছর। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ময়মনসিংহ মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কমিটি ঘোষণা হয় সম্মেলন ছাড়াই। দলটির ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জেলারই সম্মেলন হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্মেলনে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এসব জেলা কমিটির মেয়াদও এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অবস্থা আরো করুন। এমন অনেক ইউনিয়ন রয়েছে যেখানে কবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটা ওই কমিটির নেতাকর্মীরাই ভুলে গেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নবীন প্রবীণের সমন্বয় ঘটানো হবে। আওয়ামী লীগে নবীন ও তরুণদের আকৃষ্ট করতেই তরুণ নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সাথে দেশের নারী জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে ইউনিটগুলোতে নারী নেত্রীদের সংখ্যাবৃদ্ধিরও চিন্তা ভাবনাও রয়েছে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই কর্ম তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা সম্মেলনে প্রার্থী হতে চান তারা লবিং তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আর যেসব জায়গায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা রয়েছে সেই সব ইউনিটের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
পাঠকের মতামত